শনিবার কুলটিতে তৃণমূল প্রার্থীর সমর্থনে প্রচার সভায় এসে বিজেপিকে চাঁছাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন বেলা একটাতে প্রচার সভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টার গলসির সভা সেরে বেলা ১:৪৫ নাগাদ কুলটিতে এসে পৌঁছায়। মুখ্যমন্ত্রী এদিন বক্তব্যের শুরুতেই দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাকে কটাক্ষের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বলেন, নরেন্দ্র মোদী বারবার বলছেন তৃণমূলের জমানায় বাংলার উন্নতির গতিরোধ হয়ে গিয়েছে। বাংলার উন্নয়ণ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। আমরা মাত্র চারটে বিষয়ে তুলনার মাধ্যমে কেন্দ্রের সরকারকে চ্যালেঞ্জ করছি। গোটা দেশের জিডিপি যেখানে ৮.৮৭℅ বাংলার জিডিপি সেখানে ১১.৮৪℅। কৃষি বিভাগে ভারতের উৎকর্ষতার হার ১.৮২℅ সেখানে পশ্চিমবঙ্গের হার ২.১১℅। নতুন শিল্প কলকারখানা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভারতের শতকরা হার ৫.০৪℅ সেখানে পশ্চিমবাংলার হার ৭.০৪%। বেকারত্বের হার যেখানে গোটা দেশে ৮.০৩℅ পশ্চিম বাংলায় সেখানে মাত্র ৫.৬৫℅। এরপরেও ২৬ হাজার মানুষের চাকরি খেয়ে নিলেন। নিজে চাকরি দিতে পারেন না অথচ কিল মারার গোসাঁই। উত্তর দিন বাংলার উন্নয়নের পাশে ভারতের উন্নয়ণ কোথায়? না হলে এই দায় নিয়ে পদত্যাগ করুন। পাশাপাশি বিজেপি প্রার্থী আলুওয়ালিয়াকে কটাক্ষ করে বলেন, ওনার কাছে অনেক টাকা। তিনি নির্বাচনের প্রেক্ষিতে খরচ করছেন। কিন্তু আমাদের সবার টাকার দরকার, তাই টাকা দিতে চাইলে নিয়ে নেবেন। একই সাথে বলবেন ব্যাঙ্কর খাতায় পূর্বের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বকেয়া ১৫ লাখ টাকা দিয়ে দিতে। তিনি বলেন বাংলার জনগণের জন্যে রাজ্য সরকার ৬৭ টি প্রকল্প চালু করেছে। কন্যাশ্রী থেকে মেধাশ্রী সমব্যাথি প্রকল্প। জন্ম থেকে মৃত্যু প্রতিটি স্তরে জনগণের জন্যে বাংলার তৃণমূল সরকারের প্রকল্প রয়েছে। আর বিজেপি বলছে ক্ষমতায় এলে তিনমাসের মধ্যে লক্ষ্মীশ্রী প্রকল্প বন্ধ করে দিবে।১০০ দিনের কাজের টাকা বকেয়া রেখেছে। আমরা সাধারন মানুষক বিনা পয়সায় চাল দিয়ে চলেছি। আর বিনা মূল্যের চাল ফুটছে হাজার টাকার গ্যাসের ওপর। আসলে দুই দফার ভোটে বিজেপি হতাশ!! তারা ক্ষমতায় আসবেনা। প্রতিবারের মত এবারেও জুমলা কথা বলে তারা মানুষের ভোট কিনতে চাইছে। তাই বিজেপি হটাও, দেশ বাঁচাও। একই সাথে তিনি বলেন, এদিনে তিনি কিছুক্ষণ আগেই খবর পেয়েছেন, সন্দেশখালিতে এক বিজেপি নেতার ঘর থেকে বোমা সহ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলা ভালো থাকলে তবেই দেশ ভালো থাকবে। বাংলা থেকেই ইণ্ডিয়া জোটকে নেতৃত্ব দেওয়া হবে। একই সাথে স্থানীয় সমস্যার কথা মাথায় রেখে বলেন, প্রত্যেকের ঘরে পানীয় জলের ব্যবস্থা হবে। একই সাথে বারাবনির বিধায়ক ও আসানসোলের মহানাগরিক বিধান উপাধ্যায়কে বলেন ধস কবলিত মানুষদের পুনরর্বাসনের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে। তবে এদিন তিনি বক্তব্য শেষে জয় বাংলার জয়, স্লোগান সহ প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহার জয়ের জন্যে ভোটারদের কাছে আবেদন করেন। পাশাপাশি এদিন কুলটি বরাকর অঞ্চলের অবাঙালি ভোটারদের লক্ষ্য করে আগাগোড়া হিন্দি ভাষায় নিজের বক্তব্য তুলে ধরলেও সভার শেষের দিকে মঞ্চে আদিবাসী মহিলাদের সাথে ধামসা মাদলের তালে নৃত্য পরিবেশন করেন। একই সাথে নিজে খেলা হবে স্লোগান দিয়ে ধামসা বাজিয়ে জয়ঘোষ ঘোষণার মাধ্যমে সভা শেষে আসানসোলের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বেলা তিনটে নাগাদ প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহার সমর্থনে জনসভায় বক্তব্য রাখতে আসানসোলের ঊষাগ্রাম ময়দানে হেলিকপ্টারে করে পৌঁছান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি আসানসোলের প্রচার মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেন, রেশন ব্যবস্থা বজায় রাখতে রাজ্যসরকার দেয় ৯ হাজার কোটি টাকা, আর কেন্দ্রের বরাদ্দ ৭ হাজার কোটি। সেই টাকাও সময়ে এসে পৌঁছায়নি। তারপরেও বিজেপি দাবি করে রেশন তারাই দিচ্ছে। বিজেপিতো ১৫ লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলেছিল। কেও কি ৫০০০০ টাকাও পেয়েছেন? বছরে ২ কোটি বেকারের চাকরির কথা ছিল, কজন পেয়েছে, কেও কি বলতে পারবেন? উল্টে ২৬ হাজার ছেলে মেয়ের চাকরি খেয়ে নিল। আমরা রাজ্যের মানুষের জন্যে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ৬৭ টি প্রকল্প চালু করেছি। আর বিজেপি বলছে তিনমাসের মধ্যে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার উঠিয়ে দেবে। সন্দেশখালি প্রসঙ্গে বলেন বাংলা দেশের আইন কাপুন গণতন্ত্র ব্যবস্থাকে সম্মান করে। তাই দিল্লীর কেন্দ্রীয় সংস্থারা যখন খুশি তদন্ত করে যেতে পারে। অথচ মধ্যপ্রদেশের কেলেঙ্কারিতে যতবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা পৌঁছেচে, তাদের খুন হতে হয়েছে। একই সাথে তিনি বলেন, পশ্চিম বর্ধমান নতুন জেলা। যেখানে বিশ্ব বিদ্যালয় মাল্টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল বিমান বন্দর জেলা আদালত গড়ে তোলা হয়েছে।আগামীদিনে আরো অনেক কাজ করা হবে। তবে আমাদের দাবি অণ্ডাল বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর হিসাবে গড়ে তোলা হোক। রেল মন্ত্রী থাকার সময় আসানসোল থেকে সব রুটে তিনি দূরপাল্লার ট্রেন চালু করেছিলেন। অথচ আজ অনেকাংশ রুটের ট্রেন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। রেল মন্ত্রী থাকাকালীন তিনি চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভকে বহু ইঞ্জিন তৈরীর বরাদ্দ দিয়েছিলেন। অথচ আজ বিজেপি সেই কারখানাকেও বন্ধ করার চক্রান্ত করছে। তিনি বলেন বিজেপি চারশো পারের মিথ্যে স্বপ্ন দেখছে। তার পাঞ্জাব দিল্লী ইউপি মণিপুর বাংলা সহ বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপির জনসমর্থনই নেই। তাই আমি বলি বিজেপি এবার ২০০ আসনও পার হতে পারবেনা। মনে রাখবেন এবারেও যদি বিজেপি ক্ষমতায় আসে তাহলে দেশে গণতন্ত্র থাকবে না। দেশের নিজস্ব কোনো সম্পদ থাকবেনা। দেশের সমস্ত জিনিষ বিক্রি করে দেওয়ার সাথে আপনাকে আমাকেও বিক্রি করে দেবে। এনআরসির নামে আপনাকে আমাকে বিভাজিত করবে। জেনে রাখুন বিজেপি বাংলার খাদ্যাভাষ নিয়েও প্রশ্ন তোলে। তাই নরেন্দ্র মোদী ডিম মাছ মাংস খেতে বারণ করেন। তৃণমূল এই বাংলায় নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধানে বিশ্বাসী।এদিন মুখ্যমন্ত্রীর এই সভায় প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহার সাথে তার স্ত্রী পুনম সিং মন্ত্রী মলয় ঘটক জেলা সভাপতি নরেন চক্রবর্তী মহানাগরিক বিধান উপাধ্যায় সহ অন্যান্য নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলেন।
PREV
বিভিন্ন দাবি দাওয়া কে সামনে রেখে খনির পরিবহন বন্ধ করে বিক্ষোভ মহিলাদের