রানীগঞ্জের মহাবীর কোলিয়ারির দুর্ঘটনার কথা এবার সিনেমার পর্দায়। খুব শীঘ্রই ছবিটি প্রেক্ষাগৃহগুলিতে মুক্তি পেতে চলেছে। নাম “মিশন রানিগঞ্জ”। ছবিতে অভিনয় করেছেন অক্ষয় কুমার পরিণীতা চোপড়া সহ মুম্বাই এর বিশিষ্ট শিল্পীরা

স্পষ্ট বার্তা,  রানীগঞ্জ ১৭সেপ্টম্বরঃ-

১৯৮৯ সালের ১৩ই নভেম্বর রানিগঞ্জের ভূগর্ভস্থ মহাবীর কোলিয়ারিতে আচমকা দামোদর নদের জল ঢুকে পড়ে । সেই সময় খনির ভেতরে ২৩২ জন শ্রমিক কাজ করছিলেন। জলমগ্ন ওই খনির ভিতর থেকে কোনোরকমে ১৬১ জন শ্রমিক উঠে আসতে পারেন । ভূগর্ভস্থ খনির ভিতরে আটকে পড়েন ৭১ জন। এই ৭১ জন শ্রমিককে উদ্ধারের জন্যে ইসিএলের মাইনস রেসকিউ দপ্তর নানান পদ্ধতি শুরু করলেও ক্রমশ সংকট ঘনীভূত হতে থাকে। আর এই অবস্থায় অনেকটা দেবদূতের মত ইসিএল এর অ্যাডিশনাল চিফ মাইনিং ইঞ্জিনিয়ার যশবন্ত সিং গিল নিজস্ব এক অভিনব পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে আসেন । তারই মস্তিষ্কপ্রসূত এক বিশেষ ধরনের ক্যাপসুল ইস্পাত দিয়ে তার টিমের মাধ্যমে তৈরি করান নিজেদের ইসিএল এর সোদপুরের ওয়ার্কশপে । বোর হোলের মাধ্যমে সেই ক্যাপসুল নামিয়ে তিনি তিন দিনের মাথায় প্রথম উদ্ধার করেন একজন অসুস্থ কর্মীকে। তারপর ১৬ই নভেম্বর আরো ৬৪ জন অর্থাৎ মোট ৬৫ জনকে উদ্ধার করে আনেন। ৬ জন শ্রমিক মারা গিয়েছিলেন ওই দুর্ঘটনায়। ভারতবর্ষের কয়লা খনির ইতিহাসে এত বড় দুর্ঘটনার তিনদিন পরে জীবন্ত অবস্থায় ৬৫ জন শ্রমিককে ক্যাপসুল তৈরি করে উদ্ধার করার জন্যই পরবর্তীকালে মাইনিং ইঞ্জিনিয়ার যশবন্ত সিং গিল, ক্যাপসুল গিল নামে পরিচিতি লাভ করেন। শুধু তাই নয়, ১৯৯১ সালের তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি ভেঙ্কটেশ্বর রহমান তাকে সর্বোত্তম জীবন রক্ষা পদক পুরস্কারে সম্মানিত করেন। যে ক্যাপসুলটির মাধ্যমে শ্রমিকদের উদ্ধার করা হয়েছিল সেটি কুনুস্তোড়িয়া এরিয়া অফিসে সংরক্ষণ করে রাখা আছে।  পাঞ্জাবের অমৃতসরে ২২শে নভেম্বর ১৯৩৯ শ্রী যশোবন্ত সিং গিল জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। ২৬ শে নভেম্বর ২০১৯ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নিজের জন্মভূমিতেই মারা গিয়েছেন।

এই গিল সাহেবকে স্মরণ করে বলিউডের টিনু সুরেশ দেশাই পরিচালিত মিশন রানিগঞ্জ নামে একটি ছবি তৈরি হয়েছে । যে ছবির পোস্টার গত কয়েকদিন আগেই রিলিজ করা হয়েছে । সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আশা করা যায় আগামী ৬ই অক্টোবর এই ছবিটি প্রেক্ষাগৃহগুলিতে মুক্তি পেতে চলেছে। জানা গেছে মাইনিং ইঞ্জিনিয়ার যশবন্ত সিং গিলের চরিত্রে অভিনয় করছেন অক্ষয় কুমার। এই ছবিতেই পরিণীতা চোপড়াও আছেন।

কয়লা খনির সঙ্গে রানিগঞ্জের যোগাযোগ ১৭৭৪ সাল থেকেই । সেই সময় জন সুমলারব ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সঙ্গে দামোদরের পশ্চিম তীরে রানিগঞ্জে প্রথম কয়লা খননের কাজ শুরু হয়। পরবর্তী ক্ষেত্রে রানিগঞ্জের নারায়ণকুড়িতে দ্বারকানাথ ঠাকুর কার টেগর এন্ড কোম্পানিকে সঙ্গে নিয়ে রানিগঞ্জে প্রথম বাঙালি ব্যবসায়ী হিসেবে কয়লা উত্তোলনের কাজ শুরু করেন। স্বাভাবিকভাবেই ভারতবর্ষের প্রথম কয়লা প্রাপ্তির জায়গা যে রানিগঞ্জ, সেখানেই মহাবীর কয়লা খনির মতো এক  ভয়ংকর খনি দুর্ঘটনায় ৬৫ জন মানুষকে জীবিত অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়েছিল একটি সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে ক্যাপসুল তৈরি করে। আর যিনি এই কাজ করেছিলেন তার স্মৃতিতেই মিশন রানিগঞ্জ ছবিটি তৈরি হয়েছে। এই ছবির শুটিং রানিগঞ্জের নিমচা, এবিপিট কোলিয়ারি সহ বিভিন্ন কোলিয়ারি এলাকা, আসানসোল স্টেশন এবং রানিগঞ্জের  বাঁশড়া হাসপাতাল যেখানে দুর্ঘটনার পর উদ্ধার হওয়া শ্রমিকদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেখানেও শুটিং করা হয়। ছবির একটি বড় অংশের শুটিং লন্ডনের ওয়ার্কশাওরে করা হয়েছে বলেও জানা গেছে। যদিও ছবিটির শুটিংয়ের সময় প্রথম দিকে নাম ক্যাপসুল গিল করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী ক্ষেত্রে নাম বদলে যে পোস্টার সামনে এসেছে তাতে মিশন রানিগঞ্জ দেওয়া হয়েছে । প্রায় আড়াইশো বছরের রানিগঞ্জের কয়লা খনির ইতিহাসে, কয়লা খনির শ্রমিকদের জীবনে থাকা বড় দুর্ঘটনায় কিভাবে মানুষকে উদ্ধার করা যায় তা এই প্রথম সেলুলয়েডে ধরা পড়েছে। আর সেই কারণেই আসানসোল ,রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া, দুর্গাপুর সহ এই খনি শিল্পাঞ্চলের খনি শ্রমিক ,পড়ুয়া থেকে সাধারণ মানুষ উদগ্রীব হয়ে উঠেছেন ছবিটি দেখার জন্য।

 

About The Author

You might be interested in

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *